মাদারীপুরে যুগ্ম সচিবের অপেক্ষায় তিন ঘণ্টা দেরিতে ফেরি ছাড়ায় কাঁঠালবাড়ির ১নং ফেরিঘাটে অ্যাম্বুলেন্সে মারা যাওয়া স্কুলছাত্র তিতাস ঘোষের বাড়িতে এখনও চলছে শোকের মাতম। গত তিনদিনেও থামেনি তিতাসের স্বজনদের আহাজারি। সেই সঙ্গে তিতাসের মা সোনামণি ঘোষ এখনও মূর্ছা যান।
তিতাসের মায়ের আহাজারিতে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বড়কালিয়া গ্রামের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। কারও কোনো সান্ত্বনায় থামছে না তার কান্না। কাঁদতে কাঁদতে মৃত ছেলের বুকের ওপর শুয়ে পড়েন মা। 
নিহত তিতাস ঘোষ (১২) নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পৌর এলাকার বড়কালিয়া গ্রামের মৃত তাপস ঘোষের ছেলে। তিতাস কালিয়া পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল ।
সোমবার তিতাসের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে মা ও বোনের আহাজারি দেখা যায়। তিতাসের মা কিছুক্ষণ পর পর চিৎকার দিয়ে কাঁদছেন। মায়ের কান্না দেখে কাঁদছেন তিতাসের বোন। কারও কোন কথাতেই কান্না থামছে না তাদের।
তিতাসের বোন তন্নীসা ঘোষ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, গত বুধবার (২৪ জুলাই) তিতাস একটি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হলে প্রথমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় নেয়ার কথা বলেন। পরদিন বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) তিতাসকে ঢাকায় নেয়ার জন্য রওনা দেই আমরা। রাত ৮টায় কাঁঠালবাড়ি ১নং ফেরিঘাটে তিতাসকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছায়। ওই অ্যাম্বুলেন্সে আমি, আমার মা এবং আমার মামা ছিলেন। ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ওই অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়।
তিতাসের বোন আরও বলেন ফেরিঘাটে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছার দীর্ঘক্ষণ পরও ফেরিতে অ্যাম্বুলেন্স তোলা হয়নি। এর কারণ জানতে গেলে আমাদের জানানো হয় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন ভিআইপি তার আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে যাবেন। তাই ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। তখন আমার ভাইয়ের আশঙ্কাজনক অবস্থার কথা জানিয়ে সেখানকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যাই। তারা আমাদের বলেন ‘ভিআইপি আগে যাবে, তারপর অন্যরা যাবে’ এ কথা বলে তারা আমাদের ফিরিয়ে দেন।
তন্নীসা ঘোষের অভিযোগে, বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতে ফেরি আটকে আমার ভাইয়ের চিকিৎসায় ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছেন ওই ভিআইপি। তার জন্য আমার ভাই আজকে মারা গেল। এদেশে জীবনের দাম বেশি না, ভিআইপিদের দাম বেশি? আমার ভাইকে হত্যার জন্য ওই ভিআইপির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই ।
এদিকে, ছেলে হারানোর শোকে নির্বাক তিতাসের গর্ভধারিণী মা । ছেলের ব্যবহৃত পোশাক বুকে নিয়ে কখনো আহাজারি করছেন আবার কখনো চিৎকার দিয়ে কাঁদছেন।
সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই হাউমাউ করে কেঁদে জড়িয়ে ধরেন তিতাসের মা। কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার ছেলেটা বিনাচিকিৎসায় মারা গেলো। ওরা আমার পোলারে মেরে ফেলছে। আমি ফেরিওয়ালাগো পায়ে ধরেছি, তবুও ওরা ফেরি ছাড়েনি। ফেরি সময়মতো ছাড়লে আমার সোনা মানিককে বাঁচানো যেতো। যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে আমি তাদের বিচার চাই।
