অতিরিক্ত গরমে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে লবণ হারাতে শুরু করে, ফলে অবসন্ন লাগে। তাই গরমকালের খাদ্যতালিকার আবশ্যক হচ্ছে কিছু পানীয়, আর সেই পানীয়তে লবণের সঙ্গে সামান্য চিনি বা গুড় দিলে কোনও অসুবিধা হবে না। তবে বাজারজাত বোতলবন্দি পানীয়ের উপর ভরসা না রেখে ঘরে থাকা মশলা বা ফল থেকে সহজেই দারুণ সুস্বাদু ১০টি পানীয় বানিয়ে নেওয়া যায়।
আমপোড়া শরবত : কাঁচা আম-পুদিনা-ভাজা মশলার পারফেক্ট কম্বিনেশন স্বাদের দিক থেকে অসামান্য! বাংলায় কাঠের বা কয়লার আঁচে আম পুড়িয়ে শরবত বানানোটাই দস্তুর, তাতে অপূর্ব একটা স্মোকি ফ্লেভার আসে পানীয়ে। তবে ভারতের অন্যত্র কাঁচা আমকে সেদ্ধ করেও এই সুস্বাদু শরবত বানানো হয়। সাধারণ লবণের বদলে বিটলবণ ব্যবহার করুন, আম পোড়ানোর পর শাঁসটা বের করে নিয়ে যখন চটকে মাখবেন তখন সঙ্গে খানিকটা পুদিনাপাতার কুচিও মিশিয়ে দিলে খেতে ভালো হবে। চিনি-গুড়-মধু যেটা আপনার ফেভারিট, সেটা ব্যবহার করে পানীয়তে মিষ্টত্ব যোগ করুন। উপর থেকে ভাজা মশলা ছড়িয়ে দিন।
পানিজিরা: গরমকালে অনেকেই হজমের গোলমালে ভোগেন, তাঁদের জন্য আদর্শ পানীয় হচ্ছে পানিজিরা। মূল উপাদান পানি, শুকনো তাওয়ায় ভাজা ও গুঁড়িয়ে নেওয়া জিরে ও শুকনো মরিচ (ভাজা মশলা), স্বাদ অনুযায়ী বিটলবণ, লেবুর রস, পুদিনার কুচি, আদার স্লাইস, সামান্য চিনি বা গুড়। পানি ও বাকি সমস্ত উপাদান ব্লেন্ডারে দিয়ে ভালো করে চালিয়ে নিন। সারা রাত ফ্রিজে রাখুন। পরদিন সকালে উঠে ছেঁকে পরিবেশন করুন। পরিবেশনের আগে উপরে অল্প ভাজা মশলা ছড়িয়ে দেবেন।
লাস্যি/ ঘোল: পানীয়গুলোর বেস হচ্ছে ঘরে পাতা টক দই। উত্তর ভারতীয় লাস্যি বেশ ভারী, সাধারণত ফুল ক্রিম গরুর দুধে তৈরি হয় বলে লম্বা এক গ্লাস লাস্যি খেলে পেট ভালোই ভরে যায়। লাস্যিতে আম বা তরমুজও মেশানো হয়। স্বাদ বাড়াতে সামান্য চিনি, বিটলবণ, লেবুর রস ছড়িয়ে দিতে পারেন, তবে ফলের লাস্যিতে সেটাও দরকার পড়ে না। বাঙালির ঘরোয়া ঘোল লাস্যির মতো ঘন নয়, পাতলা। মিষ্টির ভাগ বেশি, তবে লবণ-মিষ্টি-গন্ধরাজ লেবুর পারফেক্ট ব্যালান্সে শরীর-মন স্নিগ্ধ হয়ে যায়।
বেলের শরবত: পাকা বেল এই ঋতুতে প্রচুর পাওয়া যায়। বেল আর দই দিয়ে তৈরি হয় চমৎকার শরবত। বেল চটকে দানা বাদ দিয়ে কেবল শাঁসটুকু বের করে নিন। তার পর দই, চিনি, সামান্য বিটলবণ, লেবুর রস, ঠান্ডা পানি দিয়ে তৈরি করে ফেলুন দুর্দান্ত স্বাদু শরবত।
ডাবের পানি: ডাবের পানি যে গরমকালে কতটা তৃপ্তি দেয়, তা নিয়ে কি নতুন করে কিছু বলার আছে? ডাবের পানি, শাঁস, বরফ একসঙ্গে ব্লেন্ডারে পিষে নিলেই দারুণ স্বাদু শরবত তৈরি হয়ে যাবে!
আখের রস: আখের রস বাজারে যেভাবে বিক্রি হয়, তা থেকে দূরে থাকতে পারলেই ভালো। একে তো খোলা জায়গায় পরিচ্ছন্নতার বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করেই ফলের রস নিষ্কাশন করা হয়। তার উপর মেশিনে ব্যবহৃত তেল সরাসরি মেশে ফলের রসে, স্বাস্থ্যের পক্ষে সেটাও খুব একটা ভালো নয়। গোটা আখ টুকরো করে কেটে বাড়িয়ে নিয়ে আসুন, তার পর খোসা ছাড়িয়ে ব্লেন্ডারে পিষে ছেঁকে নিলেই তৈরি সুস্বাদু আখের রস।
লেবু-চিনির শরবত: একেবারে বেসিক একটা শরবত যে কত উপাদেয় হতে পারে, তা বাড়িতে তৈরি লেমোনড না চাখলে হৃদয়ঙ্গম করতে পারবেন না পুরোপুরি! মূল উপাদান চিনি, বিটলবণ বা সাদা লবণ, লেবুর রস। ইচ্ছে হলে অল্প পুদিনাকুচি দেওয়া যায়। সবটা জলের সঙ্গে মিলিয়ে নিলেই তুরন্ত তৈরি হয়ে যায়। হঠাৎ আসা অতিথিকে জুড়িয়ে দিতে এই পানীয়তের তুলনা নেই!
ম্যাঙ্গো/ চকোলেট মিল্কশেক: ফুল ফ্যাট দুধ হচ্ছে এই মিল্ক শেকের প্রধান উপাদান। চকোলেট শেকের জন্য খুব ভালো মানের কোকো পাউডার বা চকোলেট সিরাপ/ গলানো চকোলেট লাগবে। দুধ, সামান্য চিনি বা মধু, সামান্য দারচিনি, চকোলেট ব্লেন্ড করে নিন। আম পাকা ও মিষ্টি হলে বাড়তি চিনি যোগ করার প্রয়োজন নেই, দুধের সঙ্গে ব্লেন্ড করে নিলেই চলবে। ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন। তবে রোজ খাবেন না, কারণ অন্যগুলির তুলনায় এই শরবত ভারী ও ক্যালোরির মাত্রা বেশি। ইচ্ছে করলে লো-ফ্যাট দুধেও ট্রাই করে দেখতে পারেন, স্বাদ তত ভালো হবে না।
কোল্ড কফি: ফুল ফ্যাট দুধ, সামান্য চিনি আর কফি পাউডার বরফসহ ব্লেন্ড করে নিলেই তৈরি! যাঁরা ইন্সট্যান্ট কফি পছন্দ করেন না, তাঁরা আগে থেকে পছন্দমতো কফি তৈরি করে দুধের সঙ্গে ব্লেন্ড করে নিন। স্বাদ বাড়াবে এক চিমটে দারচিনি গুঁড়ো ও সামান্য ডার্ক চকোলেট পাউডার। তবে এটিও কিন্তু বেশ ভারী, রোজ খেলে কোমরের মাপ বাড়বে। লো-ফ্যাট দুধও ব্যবহার করতে পারেন অবশ্য।
ছাতুর শরবত: এটি শরবত বটে, কিন্তু গরমকালে আপনার আদর্শ ব্রেকফাস্টও হতে পারে! উপাদান সামান্য – ছাতু, টক দই (বাদ দেওয়া যায়), সামান্য লেবুর রস, লবণ, চিনি (বাদ দেওয়া যায়) আর পানি। সবটা একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। উপর থেকে একটু ভাজা মশলা ছড়িয়ে দিন। পেট ভরে থাকে অনেকক্ষণ!