পিরোজপুর প্রতিনিধি ঃ গত ৩১ মার্চের স্থগিত হওয়া পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী ১৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র জমাদানের শুরু থেকে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ-সংঘাতের সৃষ্টি হয়। পাল্টাপাল্টি হামলায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক যুবলীগ নেতা জনি তালুকদার নামের এক কর্মীর হত্যার ঘটনায় মঠবাড়িয়ার নির্বাচনী পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন চতুর্থ ধাপের মঠবাড়িয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সাময়িক স্থগিত ঘোষণা করে। পরে আগামী ১৮ জুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে কমিশন।
নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের কোনো প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগই নিজেদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলীয় প্রার্থী হোসাইন মোসারেফ সাকুর (নৌকা) পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মঠবাড়িয়া পৌর মেয়র রফিউদ্দিন আহমেদ ফেরদৌস। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদের (আনারস) পক্ষে নির্বাচনী মাঠে প্রকাশ্যে কাজ করে যাচ্ছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থীর ছোট ভাই মো. আশরাফুর রহমান। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে দুই পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়ে তারা।
এদিকে তফসিল ঘোষণার পর মারমুখী হয়ে পড়ে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা। হামলায় নৌকার প্রার্থী, ইউপি চেয়ারম্যানসহ অনেকে গুরুতর আহত হন। অপরদিকে এর জের ধরে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক গুলিসাখালী ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা জনি তালুকদারকে কুপিয়ে হত্যা করার পর গত ২৮ মার্চ কমিশন নির্বাচন স্থগিত করে।
উপজেলা নির্বাচন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তিনজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসাইন মোসারেফ সাকু (নৌকা) ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. রিয়াজ উদ্দিন (আনারস)। উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি নূরুজ্জামান লিটন (লাঙল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হোসাইন মোসারেফ সাকু (নৌকা প্রতীক) বলেন, ‘আমার গণজোয়ারে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাঁর সমর্থকরা আমাকে হত্যাচেষ্টার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। আমি বিজয়ী হলে এলাকা থেকে মাদক ও সন্ত্রাসীদের মূল উপড়ে ফেলে শান্তিপূর্ণ মঠবাড়িয়া গড়ব ইনশাআল্লাহ। জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুজ্জামান লিটন বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জনমনে নানা শঙ্কা রয়েছে। তবে প্রশাসন থেকে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই মানুষ নির্বিঘেœ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট খুশিমতো নিজে দিক।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ(আনারস) বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমার বিজয় নিশ্চিত। এটা বুঝতে পেরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাঁর লোকজন এলাকার মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে, ভোট কারচুপি করে ক্ষমতা দখলের কৌশল অবলম্বন করছে। আমার নেতাকর্মীদের মারধরসহ হামলা-মামলা দিয়ে ভোট কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিতে চায়। এতে ভোটারদের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।’
এদিকে শুক্রবার বিকালে উপজেলার বড়হারজী গ্রামে নির্বাচন নিয়ে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত নৌকা সমর্থক যুবলীগ নেতা বাবু শরীফ, তাঁতীলীগ নেতা বেল্লাল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক ইউপি সদস্য কবির হোসেন, সোহেল মিয়া, সালাম মোল্লা ও সোহেলকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় মঠবাড়িয়ায় নির্বচনী পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ আবদুল্লাহ জানান, ঘটনা স্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় শহরে অতিরিত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এ বিষয় কোন পক্ষের লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মোল্লা আজাদ হোসেন বলেন, মঠবাড়িয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সমাপ্ত করার লক্ষ্যে প্রশাসন বদ্ধপরিকর। এর ধারাবহিকতায় নির্বাচনী এলাকায় সুষ্ঠ নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত রয়েছে।