ঝালকাঠি প্রতিনিধি ঃ শ্রমিকদের থাকার জন্য দখলে নেয়া হয়েছে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে। এ কারনে গরমে গাধাগাধি করেই একটি কক্ষেই ৩ জন শিক্ষক মিলে একই সাথে সারি সারি করে শিশু শিক্ষার্থীদের বসিয়ে ৩ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে। এর মধ্যে বিটুমিন পোড়া গন্ধ-বিষাক্ত ধোঁয়া ও বিভিন্ন মেশিনের বিকট শব্দে অসহায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানের চেষ্টা করা হচ্ছে, কিন্তু শিশু শিক্ষার্থীরা বিটুমিন পোড়া গন্ধ-বিষাক্ত ধোঁয়ায় শ^াস নিতেই কষ্ট হচ্ছে, এছাড়া বিকট শব্দে শিক্ষাকের কথাও শুনতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। একদিন পরেই বঙ্গবন্ধু গোলকাপ ফুটবল যে মাঠে শিক্ষার্থীরা খেলার প্রস্তুতি নিবে সে বিদ্যালয়ের পুরো মাঠ দখলে নিয়ে রাখা হয়েছে পাথরের স্তুপ, বিটুমিনের ড্রামের সারি। আর ৫/৭টি বিভিন্ন মেশিন (যন্ত্র) বসিয়ে বিকট শব্দে তৈরি করা হচ্ছে পাথর-বিটুমিনের মিশ্রণ। ওই যন্ত্রের পাশে স্থাপন করা হয়েছে বিটুমিন গলানোর কয়েকটি চুলা। মিশ্রণযন্ত্র ও চুলার ধাউধাউ আগুন, কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষে ও মাদ্রাসার কক্ষে। এই বিটুমিন পোড়ানোর ধোঁয়া ও গন্ধে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। বেশ কয়েকদিন ধরে ঝালকাঠির রাজাপুরের ১২২ নং মফেজ উদ্দিন মৃধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরো মাঠ ও পাঠদানের একটি কক্ষ এবং সলেমান হাসেমিয়া হাফেজিয়া এতিমখানার (মাদ্রাসা) বিদ্যালয়ের দখলের চিত্র এটি। এভাবে এসব কাজ চলবে আরও সপ্তাহ খানেক। ওই মাঠে নির্মাণসামগ্রী ও বিভিন্ন যন্ত্র রেখে রাস্তা সংস্কারের কাজ করাছেন উপজেলা আ’লীগের সহ সভাপতি ও রাজাপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মৃধা মজিবর। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় স্কুল কতৃপক্ষ ও এলাকাবাসী অসহায় ও নিরুপায় হয়ে মুখবুঝে সহ্য করে যাচ্ছে এ অমানুষিক যাতনা। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানালেও কোন সুরাহা পায়নি এবং ইউএনওকে অবহিত করার জন্য একাধিক বার প্রধান শিক্ষক ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। রোববার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয় ভবনের দক্ষিণ পাশের মাঠে কয়েকটি স্থানে পাথরের স্তুপ। স্তুপের পাশে মেশিনে মেশানো হচ্ছে পাথর ও বিটুমিন। এতে মেশিনের বিকট শব্দ হচ্ছে। পাশেই ধাউধাউ করে জ্বলছে বিটুমিন গলানো আগুনের চুলা। চুলায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে রাবারের স্যান্ডেল ও পীচ। দক্ষিণা বাতাশে এই চুলা ও মেশিনের কালো ধোঁয়ায় পুরো বিদ্যালয় ভবন এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। একের পর এক ভটভটি (শ্যালোচালিত ৩চাকার গাড়ি) এসে ওই মিশ্রন নিয়ে যাচ্ছে। কয়েকটি মেশিনে আবার পাথরের গুড়ির বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। তারই মধ্যে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠ। বিদ্যালয়ের একাধিম শিক্ষার্থীরা বলে, ‘পিচ পোড়া গন্ধ ও কালো ধোঁয়ার কারণে অনেক সময় ক্লাসে বসে থাকা যায় না।’ ‘আগে বিরতির সময় আমরা মাঠে খেলাধুলা করতাম। এখন বিদ্যালয়ের মাঠে পিচ পোড়ানোর কাজ চলায় খেলাধুলা করতে পারি না।’ শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা জানান, ১৩ এতিম শিক্ষার্থী রয়েছে ওই এতিমখানা মাদ্রাসায়, তাদেরও চরম সমস্যা হচ্ছে। বিদ্যালয়ে বিটুমিন পোড়ার ধোঁয়া ও গন্ধে শ্বাসকষ্টের প্রকাপ আরও বেড়ে গেছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও শ্রমিকসহ আশপাশের লোকজনের জনস্বাস্থ্য চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে। ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা মেহেরুন নেছা বলেন, ‘দেড় মাস বন্ধের পর শনিবার স্কুল খোলার পর দেখি বিদ্যালয়ের মাঠে নির্মাণসামগ্রী রাখা, স্কুলের একটি কক্ষ শ্রমিকদের থাকার জন্য দখলে নেয়া এবং বিদ্যালয় মাঠে রাস্তার মিশ্রন প্রস্তুত করা হচ্ছে। এজন্য কেহ তার কাছ থেকে কোন অনুমতিও নেয়নি। শনিবার ধোঁয়া ও শব্দের কারনে ক্লাস করাতে না পেরে ছুটি দিয়েছিলাম এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম কিন্তু কোন প্রকিকার পাইনি। পরে ইউএনও স্যারের মোবাইলে কল দিয়েছিলাম তিনি রিসিভ করেননি। বর্তমানে অসহায় ও নিরুপায় হয়ে একটি কক্ষেই প্রায় ৮০ শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাতে হচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে। সড়ক সংস্কারের কাজের দায়িত্বে থাকা (সাইড কন্ট্রাকটর) মোকলেচুর রহমান বলেন, এলাকায় অন্য কোনো ফাঁকা মাঠ বা জয়গা না পাওয়ায় বিদ্যালয়ের মাঠে নির্মাণসামগ্রী রেখে কাজ করতে বলেছেন ঠিকাদার। আর কয়েক দিনের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে ঠিকাদার উপজেলা আ’লীগের সহ সভাপতি ও রাজাপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মৃধা মজিবর সমস্যার কথা স্বীকার করে জানান, ‘কোথাও ফাকা জায়গা বা মাঠ নেই, আর কাজও অল্প তাই ওই মাঠে বাধ্য হয়ে কাজ করতে হচ্ছে। চেয়েছিলাম স্কুল বন্ধের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করবো কিন্তু রোলার ও সঠিক সময়ে শ্রমিক না আসায় কাজ শেষ করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে, কয়েক দিনের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। রাজাপুর উপজেলা এলজিইডি পরিদর্শক সুমন হোসেন বলেন, ‘‘রাজাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকার ৮শ ৬০ মিটার কার্পেটিংয়ের জন্য প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ের কাজ বাস্তবায়নের জন্য ঠিকাদার মজিবর চেয়ারম্যান কাজ করাচ্ছেন। কাজ চলছে, আরও ৫/৭ লাগবে কাজ সম্পন্ন হতে। স্কুল ও মাদ্রাসা মাঠে উপকরণ মিশ্রনের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হচ্ছে, তাকে (ঠিকাদার) বলেছি, কিন্তু জায়গা নেই তো তাই ওখানেই মিশ্রন হচ্ছে।’’ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোৎ আলমগীর হোসেন জানান, খোজ নিয়ে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মোঃ সোহাগ হাওলাদার ও জেলা প্রশাসক মোঃ হামিদুল হকের মতামতের জন্য মোবাইলে কল দিলেও তারা রিসিভ করেননি।
বিটুমিন পোড়া গন্ধ-বিষাক্ত ধোঁয়া ও বিকট শব্দে স্কুল ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত!!
Categories: বরিশাল বিভাগ