মন বসে না পড়ার টেবিলে। কথাটি খুব জনপ্রিয়। আসলেই যখন কোনো কিছুতে মন বসানো কঠিন হয়ে যায়, নিজের ওপর বিরক্তি লাগে। দেখা গেল এমন একটা কাজ হাতে এসেছে, সেটা দ্রুত শেষ করতে হবে। কিন্তু কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারছেন না। মাইক্রোসফটের এক গবেষণায় বলা হয়, মানুষের মনোযোগ কোনো কিছুতে ৮ সেকেন্ড স্থির থাকে। কিন্তু এই স্থিরতার মাত্রা বাড়ানো যায়।
অনেকে মনোযোগ বাড়ানোর জন্য নির্জন কোনো জায়গায় চলে যান। সেটি ভালো অভ্যাস। বিপত্তিটা ঘটে, যখন সঙ্গে থাকে মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ। পুরো দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে মনোযোগ বাড়ানোর কাজটি করা বাস্তবসম্মত হয়। তাই আপনার সাধ্যের মধ্যে যে বিষয়গুলো আছে, সেগুলো নিয়ে শুরুটা করে দিতে পারেন।
এ বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, যখন যে কাজটি করবেন, সব ভাবনা–চিন্তার মূলে তখন সেই কাজকে প্রাধান্য দেবেন। কেন কাজটি করা দরকার, সেটি ভাববেন। কিন্তু মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন না। বারবার যদি মনে করতে থাকেন, মনোযোগ নেই, সেটি করবেন না। দরকার হলে ব্যায়াম করুন। শুরুতে ১৫ মিনিট, এরপর ধীরে ধীরে সেই সময় বাড়ান। মেডিটেশন করতে পারেন।
১. প্রযুক্তিকে দূরে সরিয়ে: এ সময়ে এটি সবচেয়ে কঠিন কাজ বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞানীরা। কিন্তু কেউ যদি এই চেষ্টা একবার করতে পারেন, তাহলে খুব ভালো হয়। এক দিনে সম্ভব নয়, তাই সপ্তাহখানেক হাতে সময় নিয়ে এটি করে ফেলতে হবে। মানুষ চাইলে সব সম্ভব—এই বিশ্বাস মনে রাখলে দেখবেন সত্যিই পেরেছেন।
২. শ্বাস–প্রশ্বাসের ব্যায়াম: নিজেকে শান্ত ও স্থির রাখতে শ্বাস–প্রশ্বাসের ব্যায়াম খুব কাজে দেয়। পাঁচবার শ্বাস নিন ও ছেড়ে দিন। চোখ বন্ধ করে ভাবুন যে আপনার এখন মনোযোগ আসবে।
৩. ভালো মিউজিক শুনুন: অনেকে কোনো কিছু শুনলে কাজ করতে পারেন না। কিন্তু হালকা কোনো নরম সুরের মিউজিক শুনতে শুনতে আপনি মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারবেন। সুন্দর সুর, গান মনকে ফুরফুরে করে। ক্লান্তি কমিয়ে দেয়। সে কারণে আপনি চাইলে এভাবে মনোযোগ বাড়াতে পারেন।
৪. বিরতি নিন: ধরুন কিছুতেই আসছে না মনোযোগ। সে ক্ষেত্রে কাজ থেকে হালকা বিরতি নিতে পারেন। নিজের মতো করে বা সময় কাটাতে ভালো লাগে, এমন কারও সঙ্গে গল্প করতে পারেন। অ্যারোমা থেরাপি নিতে পারেন। মনোযোগ বাড়ানোর বেশ কিছু মেডিটেশন আছে, সেগুলো করতে পারেন। পড়তে ভালো লাগে, এমন কোনো বই পড়তে পড়তে দেখবেন আবার ফিরে আসছে মনোযোগ।
৫. তালিকা তৈরি করুন: সব কাজ একবারে না করে বা কাজ জমিয়ে রাখবেন না। তাতে মস্তিষ্ক জানান দিতে থাকে, অনেক কাজ সামনে। এতে মনোযোগের বিঘ্ন ঘটে। তাই প্রতিদিন অল্প অল্প করে কাজ করুন। যেদিন একেবারে করতে ইচ্ছে করবে না, চা–কফি পান বা খাওয়ার বিরতি নিন। কবে কী কাজ, সেই তালিকা বা চেকলিস্ট তৈরি করুন। যতই মুঠোফোন বা গুগল ক্যালেন্ডার থাকুক না কেন, হাতের কাছে ডায়েরি রাখুন। এতে সহজে কাজ করা যাবে। তথ্যসূত্র: প্রথমআলো।