বাংলা মোটর থেকে মগবাজার আসছিলাম। পায়ে হেঁটে। উদ্দেশ্য, শ্রাবণের তপ্ত দুপুরে মানুষ দেখা আর গরম উদযাপন। জনকণ্ঠ ভবনের সামনে আসতেই দেখলাম জটলা। এগিয়ে গেলাম। দশ পনেরো জন মানুষ গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেন সাপ খেলা দেখাচ্ছে কোনো সাপুড়ে।
এগিয়ে দেখি এক রিকশাওয়ালার সাথে স্ক্রু ড্রাইভার হাতে আনসারের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলছে। আনসার তার হাতের মারণাস্ত্র নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রিকশার সামনের চাকার দিকে। রিকশাওয়ালা ঠেকানোর চেষ্টা করছে। দুজনেই যুবক বয়সের হলেও শারীরিক গড়নের কারণে রিকশাওয়ালা সুবিধা করতে পারলেন না।
আনসার আগা চাকার সামনে গিয়ে হাতের স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে সেকেন্ডের ভেতর কয়েক ঘা বসিয়ে দিলেন। ফুসসসস শব্দ করে নিস্তেজ হয়ে গেলো রিকশার চাকা। রিকশাওয়ালা কাঁদো কাঁদো চেহারায় একবার যাত্রীর দিকে, একবার চাকার দিকে আরেকবার আনসারের দিকে তাকাতে লাগলেন।
রিকশায় যাত্রী ছিলেন স্কুলগামী মেয়ে ও তার মা। মেয়ের গায়ে সাদা স্কুল ড্রেস। জনকণ্ঠ ভবনের পাশেই তার স্কুল।
রিকশাওয়ালা যাত্রীদের দিকে তাকিয়ে বললেন, দেখলেন তো? আমি আসতে চাইলাম না। আপনারা বললেন কিছু হবে না। এখন জমিদারের বাচ্চা দিলো আমার চাকা ফুটা করে।
ট্রাম্প নালিশ শুনে চুপসে গেছিলেন। স্কুল ছাত্রী যাত্রী নালিশ শুনে চুপসে গেলেন না বরং ফুঁসে উঠলেন না। রিকশা থেকে নেমে আনসারকে গালাগাল শুরু করলেন। গগনবিদারী চিৎকার করে বললেন, আপনি বলার পর তো রিকশা ঘুরাই নিচ্ছিল। আর রোজ আমি এভাবে স্কুলে যাই। সামনেই আমার স্কুল। আমি নেমে যেতাম। আপনি কেন ঘোরার সুযোগ না দিয়ে চাকা ফুটা করে দিলেন? পেয়েছেন কী আপনি? নিজেকে কী মনে করেন? রিকশাওয়ালাকে দেখলে শাস্তি দিতে ইচ্ছে করে। আর কত বাইক, মাইক্রো উল্টা যাচ্ছে তাদের বলার হেডম নাই??
যাত্রীর গরম হওয়া দেখে রিকশাওয়ালাও গরম হয়ে গেলেন। আনসারের উপর তেড়ে যান আবার রিকশার কাছে ফিরে আসেন।
পাশ থেকে দুই পুলিশ চলে আসলো। আনসারকে ইশারা সরে পড়তে বললো তারা। আনসার চলে গেলেন জনকণ্ঠ ভবনের পেছন দিকে। আনসারের উদ্দেশ্যে যাত্রী ও রিকশাওয়ালার যৌথ শব্দবোমা অব্যাহত রইলো।
হঠাত গলি থেকে বের হলেন এক বাইকচালক। বের হয়েই রিকশাওয়ালাকে ধমক। এই ফকিরের বাচ্চা গালাগালি করিস কেন? মেয়ে দেখলেই গালাগাল করতে ইচ্ছে করে?
আমরা থ হয়ে গেলাম। এ নায়ক কোথা থেকে এলো? রিকশাওয়ালা বাইকচালককে বলল, কাকে গালি দিচ্ছি বলেন তো? এমসিকিউ কুইজে অপশন নেই দেখে বিব্রত বাইকওয়ালা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, কেন এই স্কুলের মেয়েটাকে? পাবলিক এবার হো হো করে হেসে উঠল।
পাশ থেকে মধ্য বয়সী এক লোক তার পাশের লোককে বললেন, এটাই সারা বাংলাদেশের চিত্র। অপরাধ সবাই করে। শাস্তি পায় দুর্বল। যতটুকো শাস্তি হওয়া উচিত পায় তারচেয়ে বেশি। যে শাস্তি দেয় সেও থাকে দৌড়ের উপর। আর পাবলিক ঘটনা না জেনেই হিরো সাজার জন্য এটা সেটা বলে বসে।
-মোঃ আসাদুল্লাহ