ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। তবে কারো কারো ঈদ অখুশীতে পরিণত হয়। সব হারিয়ে ঈদ যেন মাটি হয় তাদের। কারণ, ঈদ আসলেই সক্রিয় হন ছিনতাইকারীরা। তাদের টার্গেট থাকে হাঁট, বিপণিবিতান, বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট আর রেলওয়ে ষ্টেশন কেন্দ্রিক।
জানা যায়, ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীসহ নগরবাসী কোটি-কোটি টাকার লেনদেন করে থাকে। এছাড়া কোরবানি উপলক্ষ্যে গরু-ছাগলের হাঁটেও কোটি-কোটি টাকার পশু বেচা-কেনা হয়। আর এসব টাকার জন্য ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এছাড়া পশুর হাঁটে সক্রিয় থাকে জাল টাকা তৈরির চক্রের সদস্যরা।
জানা গেছে, গত এক মাসেই প্রায় ৫ শতাধিক ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে দুই শতাধিক ছিনতাই ও ডাকাতির মামলা হয়েছে। এছাড়া এদের মধ্যে অনেকে ঝামেলার ভয়ে মামলা করেন না।
জানা গেছে, অপরাধীরা ছোট ছোট বাহিনী, উপবাহিনী গড়ে রাজধানীর ঈদ বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের টার্গেট করতে মাঠে নামে। সম্প্রতি রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজি চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এরমধ্যে রাজধানীর খিলগাঁও থেকে অস্ত্রসহ তিন চাঁদাবাজ ও মহাখালী থেকে চারজন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে, রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে ছিনতাইকারী চক্রের ছয় সদস্যকে আটক করা হয়। তারা পশুর হাটের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করছিল। এছাড়া ছিনতাইকারী চক্রের আরও ৬ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব-১০।
র্যাব-১০ এর উপ-অধিনায়ক মেজর মো. আশরাফুল হক বলেন, কোরবানির ঈদকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে ওঠে এ চক্রটি। তারা দীর্ঘদিন ধরে সুযোগ পেলেই সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও আশেপাশের এলাকায় পথচারীদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান মালামাল চুরি ও ছিনতাই করে আসছিল।
এদিকে, আসন্ন ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হওয়া অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি ও ছিনতাইকারী সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে সতর্ক করতে প্রচারণা চালাচ্ছে পুলিশ। শনিবার ডিএমপির পক্ষ থেকে অজ্ঞান পার্টির হাত থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতামূলক একটি পরামর্শ দেওয়া হয়।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: ১. ভ্রমণ পথে অযাচিতভাবে অপরিচিত কেউ অহেতুক ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করলে তাকে পাত্তা না দেই। মনে রাখবেন দুষ্ট লোকেরাই মিষ্ট কথা বলে ফাঁদে ফেলে। ২. বাসে, ট্রেনে বা লঞ্চে ভ্রমণের সময় লজেন্স বা চকলেট, আইসক্রিম, সিগারেট জাতীয় কোনো খাবার গ্রহণ করা যাবে না। ৩. ফুটপাতে বা রাস্তার মোড়ে টং দোকান থেকে খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪. ফেরিওয়ালা বা ভ্রাম্যমাণ কারো কাছ থেকে আচার, আমড়া, শসা, পেয়ারা প্রভৃতি খাওয়া যাবে না। ৫. আপনার পাশের সিটের লোকটিই আপনার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে চাইবে এবং এক সময় নিজে থেকে খাবার (কেক, চিপস, কোমল পানীয়, কাটা পেয়ারা বা আনারস ইত্যাদি) কিনে সেও খাবে আপনাকেও খেতে বলবে।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মো. মাহবুব আলম বলেন, ডাকাতি-ছিনতাইয়ের ঘটনা এলার্মিং হিসেবে নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ সক্রিয় গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পলাতক ডাকাত ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে তৎপর ডিবি পুলিশ।
পশুর হাটের নিরাপত্তা সম্পর্কে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আমাদের সবার সঙ্গে সমন্বয় করে নির্ভেজাল কোরবানির পশুর হাটের ব্যবস্থা করা হবে। কোরবানির পশুর হাটে থাকবে পুলিশের কঠোর নজরদারি।