ঈদ ও কোরবানিসহ বড় উৎসব এলেই জাল নোট প্রতারকচক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। অধিক লাভের আশায় প্রতারণাকারীরা সাধারণত ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বেশি জাল করে। ঈদকে সামনে রেখে বর্তমানে বাজারে উড়ছে লাখ লাখ টাকার জাল নোট। রাজধানীতে আরো অন্তত ১০ টি চক্র জাল টাকার নোট বাজারে ছাড়ার জন্য সক্রিয় বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এসব চক্রকে ধরার জন্য গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। এসব সিন্ডিকেটের সাথে নারীরাও জড়িত।
গত ১১ জুলাই ১০ জন জাল নোট কারবারিকে গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছ থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) এসব তথ্য জানতে পেরেছে। খুব শিগগিরই এসব চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর ডিবির এক কর্মকর্তা।
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে, হুমায়ূন কবীর চক্রসহ রাজধানীতে অন্তত ১০টি চক্র ঈদের বাজারে জাল নোট ছড়াতে সক্রিয় রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা বাংলাদেশি জাল নোট তৈরি করে তা বাজারজাত করে আসছিল। এই জাল টাকা পলাতক আসামিদের সহযোগিতায় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আসল টাকার সঙ্গে মিলিয়ে দিয়ে বাজারে ছাড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে যে ১০টি জাল টাকা চক্র কাজ করছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় হুমায়ূন কবীর চক্র। হুমায়ূন কবীর একসময় পুলিশে কনস্টেবল পদে চাকরি করতেন। চাকরি পাওয়ার পর তিনি বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। অবশেষে ২০০৩ সালে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপর রাজশাহী এলাকার একটি জাল নোট তৈরির চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কয়েকদিন পর নিজেই গড়ে তোলেন জাল নোট তৈরির চক্র। তাঁর রয়েছে ৮-১০ জনের একটি দল, যারা টাকা বানানো ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। সেই সময় থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত হুমায়ূন কবীরকে পুলিশ, র্যাব ও ডিবি পাঁচবার গ্রেপ্তার করেছে। প্রতিবারই তিনি জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও জাল নোটের কারবারে জড়িত হন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত তিন ধরনের জাল নোটের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ‘ওয়াশ নোট’ নামের জাল নোট বেশি টাকায় বিক্রি করা হয়। এটি বানাতে ব্যবহার করা হয় প্রকৃত ১০০ টাকার নোট। ওই নোটকে রাসায়নিক দ্রব্য দিয়ে সাদা করে প্রিন্টারের মাধ্যমে ৫০০ টাকার নোট জাল করা হয়। এক লাখ টাকা মূল্যমানের জাল ‘ওয়াশ নোট’ বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। আর্ট পেপারে তৈরি জাল এক হাজার টাকার ১০০ টি নোট তারা চক্রের সদস্যদের কাছে ২৪-২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে। খসখসে কাগজে তৈরি এক লাখ টাকা মূল্যমানের জাল নোট ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।
এদিকে জাল নোটের এই অবৈধ কারবারিদের হাত থেকে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে প্রতিবারের মতো এবারো বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের সচেতনতার অংশ হিসেবে দেশের কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংককে আসল নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য-সংবলিত ভিডিওচিত্র প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।