আশিক মাহমুদ রিয়াদঃ
১.বাপজান আইজক্যা আফনে ঘরে আওয়ার সময় আমার লইগা মিষ্টি নিয়া আইবেন, লগে চকলেটও নিয়া আইবেন। আফনে আমার লইগা কিছু আনেন না৷ হেইতে আমার মনডা খারাপ হইয়া যায়। মতিন মিয়া মেয়েকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,”আইচ্ছা মা! আইজক্যা বাড়িতে আওনের সময় তোর লইগা মিষ্টি আর চকলেট নিয়া আমু! অহন আয় দেহি আমার কোলে।
জামিলা বেগম রান্নাঘরে ব্যাস্ত৷ একটু পরেই মতিন মিয়া বের হয়ে যাবে৷ তাই তড়িঘড়ি করে ঝালমুড়ির জন্য ঝোল তৈরী করে দিচ্ছেন।
“কই গো হইলো তোমার?”,বলল মতিন মিয়া।
,জামিলা বেগম ঝোল বাটিতে ঢালতে ঢালতে বলল,”আরেকটু বার চান, চুলা থেইকা নামাইলাম মাত্র!”
“দেরি হইয়া যাইতাছে তো! ”
“একটু দেরি হইলে কিছু হইব না। ”
প্রতিদিনের মতো আজকেও মতিন মিয়া ঝালমুড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছেন। রাস্তায় হাটতে হাটতে হাঁক দিচ্ছেন,”ঝালমুড়ি! গরম গরম ঝালমুড়ি। ” কেউ কেউ ঝালমুড়ি কিনছে৷ মতিন মিয়া খুব কায়দা করে ঝালমুড়ি বানায়৷ মুড়ি,চানাচুর,আর জামিলা বেগমের রান্না করা ঝোল একটি বাটায় দিয়ে সেটিকে কায়দা করে নাড়াচাড়া করে তারপর হাতের তালুতে গোটা পাঁচেক টাক দিলেই হয়ে যায় ঝালমুড়ি। এই কাজগুলো খুব সহজেই করে ফেলে সে। লোকজন তার ঝালমুড়ি খেয়ে যখন প্রশংসা করে। তখন তার মনে পড়ে জামিলা বেগমের কথা। সব জামিলা বেগমের রান্না করা ঝোলের জাদু। চানাচুর গুলোর উপর পিতলের ঘটিতে কয়লায় আগুন জ্বালিয়ে রেখে দেন। তাতে চানাচুর গরম থাকে৷ মতিন মিয়ার ঝালমুড়ি বিক্রির শিডিউল আছে। সে সময় অনুযায়ী একেক জায়গায় চলে যান। কখনো
২.ইশতিয়াক সাহেব ছোটখাট একটা অফিসে চাকরী করেন। প্রতিদিন নিয়ম অনুযায়ী সকাল দশটার আগে অফিসে পৌছাতে হয়। ঠিক দশটায় বস অফিসে আসেন৷ তিনি অফিসে এসে কোন টেবিলই খালি দেখতে চান না। একটা টেবিল খালি থাকলে তিনি সেখানে গিয়ে বসে। তারপর সেই টেবিলে যিনি বসেন তিনি আসেন। বসকে হাজারটা অযুহাত দিয়েও পার পাওয়া যায় না। শাস্তি হিসেবে মূল কাজের সাথে আরো দুএকটা বাড়তি কাজ চাপিয়ে দেওয়া হয়। এ জন্য বসকে সবাই ভয় পায়।
ইশতিয়াক সাহেব গোমড়ামুখ করে খাবার টেবিলে বসে আছেন।সোহানা এখনো কিচেনে কি করে কে জানে৷ অফিসের শুরু হতে আর মাত্র আধাঘন্টা বাকি। ইশতিয়াক সাহেব কোন মতে খেয়ে অফিসের দিকে উল্কাবেগে ছুঁটলেন। ইশতিয়াক সাহেব অফিসে পৌছলেন দেরি করে। রাস্তায় জ্যাম ছিলো বলে বাস থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে অফিসে পৌছলেন। তবুও সময় মত পৌছতে পারেননি। টেবিলের ওপর নীলরঙা দুটো ফাইল রাখা৷ ফাইলের ওপর স্টিকি নোটে লেখা –
‘অফিসে আর দেরি করে আসবেন না ‘- বস
৩.সারাদিনের প্রচুর খাটাখাটুনি হয়েছে ইশতিয়াক সাহেবের৷ নিজের কাজ সহ বসের চাপিয়ে দেওয়া অতিরিক্ত কাজগুলোও করে ফেলেছেন৷তার সারা শরীর জুড়ে এখন তিনি বসে আছেন বাসের সিটে৷ জ্যাম লেগেছে। এই জ্যাম সহজে ছাড়বে না।
‘ঝালমুড়ি! গরম গরম ঝালমুড়ি ‘ বলতে বলতে ঝালমুড়ি ওয়ালা বাসে উঠলো৷ ঝালমুড়ি ওয়ালার নাম মতিন মিয়া৷ বাসের লোকজন তার কাছ থেকে ঝালমুড়ি কিনছে৷ ঝালমুড়িওয়ালা আশফাক সাহেবের কাছে এসে বলল,’স্যার ঝালমুড়ি দেই? গরম গরম ঝালমুড়ি ‘ আশফাক সাহেব বললেন ‘না’ ঝালমুড়িওয়ালা পিছনের সিটের দিকে অগ্রসর হলো৷ আশফাক সাহেবের মনে হলো সারাদিন কিছু খাওয়া হয়নি। ঝালমুড়িওয়ালাকে ডাক দিলেন তিনি। ঝালমুড়ি হাতে নিতে ঝালমুড়ি ওয়ালাকে টাকা দিতে গিয়ে আবিস্কার করলেন পকেটে মানিব্যাগ নেই৷ হতভম্ব হয়ে বললেন, “আমার মানি ব্যাগ কোথায়। ” এই তো একটু আগেও তিনি বাসের কন্টাক্টরকে মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিয়েছেন৷ মানিব্যাগ কোথায় গেল! আমার মানি ব্যাগ কোথায় গেলো বলে চিৎকার করতে লাগলেন৷ বাসের কন্টাক্টর ছুঁটে এসে বলল, “কী হয়েছে? কী হয়েছে?”, “আমার মানিব্যাগটা খুজে পাচ্ছি না,পকেট মেরে দিয়েছে কেউ। এইতো আপনাকেও একটু আগে টাকা দিলাম। কোথায় গেলো?” ঝালমুড়ি ওয়ালা বলল,”স্যার আফনে টেনশন কইরেন না৷ আফনার টাকা দেওয়ান লাগবো না৷ ” আশফাক সাহেব রেগে আগুন হয়ে বলল,”টেনশন করবো না মানে? ” পাশ থেকে একজন বলে উঠলো, “ও নিছে কিনা সেইটা চেক কইরা দেখেন৷ কথায় আছে না চোরের মায়ের বড় গলা।” বাসের সবাই যেন সম্মতি দিলো তাতে৷ সবাই ঝালমুড়িওয়ালার দিকে মার মার বলে এগিয়ে এলো। মতিন মিয়ার হাত থেকে ঝালমুড়ির থালা পড়ে গেলো।
কুপি জ্বলছে৷ মতিন মিয়ার মেয়েটা তার মাকে বলছে,”মা আব্বার কি হইছে? আব্বা আইজক্যাও আমার লইগা মিষ্টি আর চকলেট আনে নাই”
জামিলা বেগম চোখের পানি মুছতে মুছতে মেয়েকে বলল,”চুপ কর ছেমরি!” মতিন নিয়া ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। মেয়েটা মায়ের কথায় অভিমান করে বসে আছে৷
আশফাক সাহেব বসার ঘরে বসে তার ছেলেকে সামাজিক রীতি-নীতি শেখাচ্ছেন৷ ছেলের সেদিকে খেয়াল নেই৷ সে মোবাইল ফোনে গেমে ব্যস্ত৷ আশফাক সাহেব বলছেন,’আমাদের সবার প্রতি ভাতৃত্ববোধ থাকতে হবে৷ সমাজের সব মানুষই এক চোখে দেখতে হবে৷ তাহলেই সমাজ সুন্দর হবে “