ধ্বংসের পথে বেসিক ট্রেড প্রতিষ্ঠানগুলোঃ নির্বিকার বাকাশিবো।


করোনা কালীন পরিস্থিতিতে ধ্বংস হতে চলেছে বেসিকট্রেড প্রতিষ্ঠান গুলো। সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে থাকা বেসিক ট্রেড প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র কম্পিউটার কোর্স ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানই রয়েছে তিন হাজারেরও উপরে। উক্ত প্রতিষ্ঠান মালিকেরা অনেকেই জানিয়েছেন যে, তাদের অবস্থা বর্তমানে অত্যন্ত শোচনীয় । অচিরেই প্রতিষ্ঠান চালু করতে না পারলে অথবা বিকল্প কোন ব্যবস্থা না হলে এই ট্রেডের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই হয়ত বন্ধ হয়ে যাবে। আবার এরই মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের অফিস ভাড়া দিতে না পাড়ায় বাড়ির মালিক পক্ষের সাথে নানা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছেন। অনেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে তাদের কম্পিউটার ও আসবাবপত্র বিক্রয় করার চেষ্টা করছেন।


বাংলাদেশ কারিগরী শিক্ষাবোর্ড (বাকাশিবো) এর অধিনে কম্পিউটারের বিভিন্ন কোর্সে ৩৬০ ঘন্টা মেয়াদী প্রায় ৩৩০০ বেসিক ট্রেড প্রতিস্ঠান রয়েছে বলে জানা গেছে। বাকাশিবো’র নির্বিকার ভূমিকার কারনে প্রতিষ্ঠান মালিকেরা অভিবাবকহীন সন্তানের মত দিশেহারা হয়ে আছেন ।

প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দাবী ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সবসময় সবচাইতে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে তারা । শরীরে রক্ত প্রবাহের মতোই তারা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে নিরবে কাজ করে গেছেন, বাংলাদেশের আইটি খাতে সবচাইতে বেশি দক্ষ জনশক্তি তৈরী করেছে এই প্রতিষ্ঠান গুলো। অন্যান্য যে কোন প্রতিষ্ঠানের চাইতে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে তাদের ভূমিকাই অগ্রগন্য এই দাবী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের।

বেসিক ট্রেড পরিচালক এসোসিয়েসন ও বিটিটিআরএ নের্তৃবৃন্দগণ মনে করেন কারিগরী শিক্ষাবোর্ড বর্তমান পরিস্তিতিতে তাদের অভিবাবকের ন্যায় আচরন না করে বরং বিমাতা সূলভ আচরনই করছেন। তারা জানিয়েছেন অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা কোচিং সেন্টারের মত তাদের প্রতিষ্ঠান নয় । তারা না পাচ্ছেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা, না পাচ্ছেন সাধারন ব্যবসায়ীদের সুযোগ সুবিধা। তাদের ভাষ্যমতে বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের অনেকেই সর্বশান্ত হয়ে পথে বসতে চলেছেন।কারন তারা খুব অল্প ফী নিয়ে দেশের ডিজিটালাইজেশনের জন্য কাজ করেন, তৈরী করেছেন লক্ষ লক্ষ দক্ষ জনশক্তি, দেশে বিদেশে তারা দক্ষতা ও সুনামের সাথে কাজ করছে, দেশের জন্য আয় করছে বৈদেশিক মূদ্রা। অপরদিকে বোর্ডের নিয়ম নিতী অনুসরনের কারনে উপার্জনের এক বড় অংশ খরচ হয়ে যায়। আবার বিষয়টা যেহুতু প্রযুক্তি নির্ভর সেকারনে এর তদারকি ব্যায় অত্যন্ত বেশি। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত তারা মাসে মাসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতনও পান না। মোট কথা কোর্স ফী’র দুই তৃতীয়াংশ বা ততোধিক খরচ হয়ে যায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভূক্ত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায় কোন সরকারী সুযোগ সুবিধাও তারা পান না। তাই দু-একটি ব্যতীক্রম ছাড়া অধিকাংশেরই কোন সঞ্চয় বা ব্যাংকব্যালেন্স নেই। এমতাবস্থায় তাদের অবস্থা পথে বসে যাওয়া ছাড়া আর কি হতে পারে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে এক প্রতিষ্ঠান প্রধান বলেছেন, “কারিগরী বোর্ড আবেদন করা সত্বেও আমাদের বাচাঁর জন্য সরকারী কোন পৃষ্ঠপোষকতার ব্যবস্থাই করছে না উপরন্তু বিভিন্ন ফী’র জন্য নোটিশ দিয়ে যাচ্ছে।”

ডীপনেট আইটির মালিক শামসুজ্জামান মামুন বৃত্ত নিউজকে জানিয়েছেন “আমার আশংকা হচ্ছে যে, সরকার যদি অচীরেই এদিকে নজর না দেয় তবে হয়তো এ খাতটি ধ্বংসের মূখে আছরে পড়বে এবং বাংলাদেশেকে এ ক্ষতি কাটিযে উঠতে বহুদিন সময় লেগে যাবে, কেননা এখাতে শিক্ষাদানকারী অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানগুলোই শুধু থিওরী ও সার্টিফিকিটের বা ভালো রেজাল্টের দিকেই নজর দিয়ে থাকে (সামান্য কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া), কিন্তু আমরা বেসিক ট্রেড প্রতিষ্ঠানগুলোই প্রকৃত দক্ষতার দিকে ফোকাস করে থাকি। তাই আমরা্ ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অগ্রগণ্যতার দাবীদার। অথচ আমরাই আজ সবচাইতে উপেক্ষিত হচ্ছি। শুধুমাত্র অবহেলার কারনেই এরকম একটি প্রতিষ্ঠিত খাত ধ্বংস হতে বসেছে।” তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিবর্গ ও সরকারের উচ্চমহলের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

আইটি খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরীতে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানই বিভিন্ন সময়ে নানামূখী সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকলেও বেসিক ট্রেড প্রতিষ্ঠান সমূহ রয়ে গেছেন অনেকটা অবহেলাতেই। এমনকি ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রসমূহ গুলোও সরকারী খরচেই গড়ে উঠেছে যা আত্মীয়করন বা তদবীর তদারকির কারনে অনেকক্ষেত্রেই অযোগ্য লোকের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে বলে দাবী অনেকেরই । উপরন্তু বেসিক ট্রেড প্রতিস্ঠানগুলো দক্ষতার সাথে সকল দ্বায়িত্ব পালন করে থাকলেও তারাই রযেছেন অবহেলায়। প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ আশু করোনা কালীন এ পরিস্থিতিতে অন্তত টিকে থাকার জন্য হলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা দাবী করছেন।


Categories: অন্যান্য,জাতীয়,টপ নিউজ,ব্রেকিং নিউজ,শিক্ষাবার্তা,সারাদেশ

ব্রেকিং নিউজ