টাকা ছিনতাইয়ের উদ্যোশেই ছুরিকাঘাতে পিরোজপুরে চীনা নাগরিক লাও ফান ওরফে ফান ইয়াংজুন কে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম। এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত দুই আসামী হোসেন সেখ ও সাব্বির আহম্মেদ শেখ কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পিরোজপুর পুলিশ সুপার কার্যালয় মিলায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা সাংবাদিকদের জানান বরিশাল রেঞ্জের ডি আই জি মো. শফিকুল ইসলাম পিপি এম,বিপি এম।
গ্রেপ্তারকৃত হোসেন সেখ (১৯) পিরোজপুর সদর উপজেলার মরিচাল এলাকার ছোরাপ সেখ পুত্র এবং সাব্বির আহম্মেদ সেখ (২০) একই এলাকার হায়দার আলী সেখের পুত্র।
গত ০৭ অক্টোবর ছুরিকাঘাতে নিহত চীনা নাগরিক লাও ফান ওরফে ফান ইয়াংজুন (৫৮) পিরোজুপরের বেকুটিয়ার এলাকায় কঁচা নদীতে নির্মানাধীন ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর টেকনিশিয়া পদে কর্মরত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ব্যাপক তদন্তের পর মাত্র ৬ দিনে মুল আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। গ্রেপ্তার হোসেন শেখ ও সাব্বির আহম্মেদ সেখ নির্মানাধীন ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর নির্মান কাজে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। গত মার্চ মাসে শ্রমিক সাব্বিরের সুপারিশে হোসেন সেখ নির্মান কাঝের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু হোসেন শেখের কাজ ভাল না হওয়ায় তাকে মাত্র ১৪ দিন পরে কাজ থেকে বাদ দেয় চীনা কর্তৃপক্ষ। এ সময় হোসেন শেখ তার কাজের ব্যবহৃত হেলমেটটি নিয়ে যায়। পরবর্তী মাসে বেতন দেয়ার সময় কর্তৃপক্ষ হেলমেট বাবদ ৫ শত টাকা কেটে রাখে। এ ক্ষোভ থেকে চীনা নাগরিক টেকনিশিয়ান ফান ইয়াংজুন এর কাছ থেকে টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন এবং কখন কি ভাবে শ্রমিকদের বেতনের টাকা নিয়ে যায় তা পর্যবেক্ষন করে। পরে সাব্বিরের সাথে হোসেন ফান ইয়াংজুন এর কাছ থেকে টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম আরো জানান, পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৭ অক্টোবর বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে চীনা নাগরিক ফান ইয়াংজুন শ্রমিকদের বেতন দিতে কয়েকটি ব্যাগে করে ২ লক্ষ ৫৩ হাজার ২৩০ টাকা নিয়ে বাইসাইকেলে করে বাসস্থান থেকে মুল সেতুর দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে সাব্বিরের তথ্যমতে ওঁৎপেতে থাকা হোসেন সেখ টাকার ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেস্টা করলে ফান ইয়াংজুন বাধা দেয়। তখন হোসেন তাকে ছুড়িকাঘাত করে একটি টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত ফান ইয়াংজুন পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
পরবর্তীতে পুলিশ ১২ অক্টোবর কর্মরত শ্রমিক সাব্বিরকে সন্দেহ জনক আটক করে জিজ্ঞাসা বাদ করলে সকল ঘটনা সে পুলিশকে জানায়। পুলিশ ওইদিন রাতেই হোসেন শেখকে তার বাড়ি থেকে আটক করে। এসময় তার কথিতমতে বাড়ির ভিতর খাটের নীচ থেকে ছিনতাইকৃত ১ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র উদ্ধার করে। এরপর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে হোসান শেখ ও সাব্বির আহমেদ শেখ সব দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করে।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন পিরোজপুরের পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়াটার) কাজী শাহনেওয়াজ , অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) থান্ডার খাইরুল হাসান।
পুলিশ এর আগে এ হত্যাকান্ডে জড়িত অভিযোগে সিরাজ শেখ (৩৫) ও রানা সেখ (৩৪) নামের দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছিলো।
উল্লেখ্য, গত ০৭ অক্টোবর নির্মানাধীন ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর কুমিরমারা এলাকায় অবস্থিত চায়না ব্যারাক থেকে কর্মচারীদের বেতনের টাকা নিয়ে চীনা নাগরিক লাও ফান ওরফে ফান ইয়াংজুন সেতুর নির্মান কাজের দিকে যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীরা টাকা ছিনতাই করার জন্যই তাকে ছুরিকাঘাত করে। পরে স্থানীয়রা ও নির্মানাধীন ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী ব্রিজের কর্মকতারা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেলে সেখানেই তিনি মারা যায়।
এ ঘটনায় নির্মানাধীন ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর সিকিউরিটি ইনচার্জ কাও চিয়েন হুয়া বাদী হয়ে রাতেই অজ্ঞাত আসামীদের নামে পিরোজপুর সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।