স্টাফ রিপোর্টার: বরিশাল নগরীর সদর হাসপাতালের মেইন গেটের সামনে সড়কে এক প্রসূতী নারীর সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটেছে। সন্তান প্রসব করা ওই নারীর নাম মুক্তা বেগম (৩০), যিনি বিমান বন্দর থানার কড়াপুড়ে গ্রামে মোঃ নাসির হাওলাদার এর স্ত্রী। ঘটনার সূত্র থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বরিশাল সদর রোডের পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে গর্ভবতী স্ত্রীর চেকাপ করে বের হওয়ার পর দুই-তিন মিনিটের মধ্যেই প্রসব বেদনা ওঠে ওই নারীর। এসময় সদর হাসপাতালের মেইন গেটের সামনেই সন্তান প্রসব করেন তিনি। অসহায় অবস্থায় স্বামী নাসির হাওলাদার এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করলেও সাহায্য করার জন্য কাউকে পাননি। আশেপাশে যারা ছিল, তারাও কেউ সাহস করে এগিয়ে আসেনি। এ সময়ে নাসির হাওলাদার তার স্ত্রীকে নিয়ে রাস্তার পাশে বসে থাকতে দেখলে ডিপ্লোমা (ম্যাটস) ডাক্তার শফিকুল ইসলাম (শামীম) ওখানে আরো দু’একজনের সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসেন। অতপর প্রসূতিকে সদর হাসপাতালে গাইনীর লেভার ওয়ার্ডে নিয়ে যান। সদর হাসপাতালের দায়িত্বরত নার্স ঐ প্রসূতি নারীর ডেলিভারি
করেন এবং প্রাথমিক সুস্থতার যা করার দরকার, তার করেন। পরবর্তীতে নবজাতকের অবস্থা ভালো না থাকায় মা ও নবজাতককে শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। এসময়ে প্রসূতি নারীর স্বামীর হিতাহিত জ্ঞান না থাকায় এবং রোগীর সাথে পরিচিত কেউ না থাকায় ডাক্তার শামীম ফেসবুক গ্রুপে বিষয়টি জানান এবং পরিচিত অন্যান্য ডাক্তারদের কাছে সাহায্য চান। ওই গভীর রাতে তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে সদর হাসপাতালের ইন্টার্নীশিপ গাইনী ওয়ার্ডের স্বর্ণা মিত্র, তাজিনা তন্নী, শারমিন আক্তার এবং সার্জারির ফাহাদ হোসেন এবং ইমরান গাজী সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন। তাঁদের সাহায্যে রোগী ও নবজাতককে এ্যাম্বুলেন্সে করে তাৎক্ষণিক শেরে ই বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নবজাতকের অবস্থা খুবই খারাপ হওয়ায় মেডিকেলে ভর্তি করানোর পরপরই বাচ্চাটি মারা যায়। চিকিৎসারত ডাক্তাররা জানান, “মায়ের অবস্থাও তেমন ভালো না। বাচ্চা প্রসব করেছে, কিন্তু তার প্লাসেন্টা বের হয়নি। আর সেজন্য হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। সেখানে প্লাসেন্টা বের করা হয়।” এদিকে প্রসূতি ওই নারীর অপারেশন করা হলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় এবং এ পজেটিভ রক্ত প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। রাত ১ টার সময়ে তখন রক্তের ব্যবস্থা করা বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পরলেও সদর হাসপাতালের ইন্টার্নশিপ ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়তায় তাঁরা রক্তের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হন। এ বিষয়ে ডাক্তার শফিকুল ইসলাম শামীমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি প্রসূতি নারী ও নবজাতকে বাঁচাতে। কিন্তু খুবই দুঃখের বিষয় বাচ্চাটির মা এখন কিছুটা সুস্থ থাকলেও আমরা বাচ্চাটিকে বাঁচাতে পারিনি।” রক্ত দেয়ার পর রোগী এখন কিছুটা ভালো আছেন। ইন্টার্নশিপ ছাত্র-ছাত্রীরা সার্বিক সুস্থতা দেখে রাত ২ টায় বাসায় ফেরেন এবং পর দিন সকালে ঐ রোগীর সার্বিক অবস্থা দেখতে তার খোঁজ খবর নেন।