নির্ঘুম এক শীতের রাত! কয়েকদিন যাবৎ বেশ শীত পড়েছে চেনা রাস্তায়, রাতের কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে শহর। হিমশীতল চাঁদের মায়াবী জোছনায় আর শিশিরের টুপটাপ শব্দে অন্যরকম এক সুরের ব্যঞ্জনা ছড়িয়ে গেছে। চারিদিকে নিশ্চুপ নিরবতা আর শুন্যতায় ঘেরা এক মায়াবী পরিবেশ যেন গ্রাস করছে শহরের চেনা ব্যস্ততাকে। এখন প্রায় ১০টা। একটু পরেই সুদূর চীন থেকে পিএইচডি মূল্যায়নে নিজেকে যাচাইয়ের জন্য এক দীর্ঘ অপেক্ষায় বসে আছি। রাত ১০টায় শুরু আর শেষ হয় রাত ৩ঃ৪৫। প্রথমে পুরো রুম ক্যামেরায় স্ক্যানিং শেষে মনিটরিং শুরু।পুরোটা সময় ভিডিও ধারন চলছে। চার পার্টের মুল্যায়ন, এভাবে প্রায় সারারাত। আসলে গোরু খোঁজা (গবেষণা) অনেক ধৈর্যের কাজ। রাতের শেষ প্রহর চোখে আর ঘুম নেই। বিছানার এপাশ ওপাশ করেও জীবনের কোন পাশের হিসাব মিলে না, হিসাবের খাতা অমিল রেখে, প্রকৃতির মাঝে নিজেকে খুঁজে ফেরা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। শীতের রাতে শুনশান নিরবতা ভেদ করে দূরে কোথাও নিশাচর পাখির তীক্ষ্ণ ডাক ক্ষনে ক্ষনে কানে ভেসে আসে। আমার পৃথিবীকে দূরে ঠেলে দিয়ে একটু জীবনের মানে খুঁজতে গিয়ে নিজেকে খুঁজে পাই ঘাসের ডগায় মুক্তোকনায়। হঠাৎ পাখির কলরবে ঘোর কেটে যায়, এরপর আযানের সুমধুর ধ্বনি কানে ভেসে আসে। ভোরের কুয়াশার আড়ালে ধানক্ষেতের উপর দিয়ে পাখিদের উড়ে যাওয়ার দৃশ্য অস্পষ্ট হওয়ার ক্ষণে, আর ভোরের সোনালি রোদে অবগাহনে নতুনের স্বপ্ন একেঁ যাওয়া- হয়তো এটাই জীবন। এটাই জীবনের মানে।
লেখক: মো. তারিকুল ইসলাম
পিএইচডি গবেষক, হুজহং ইউনিভার্সিটি অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি, চীন।