লংগদুতে আগুনে ক্ষতিগ্রস্তরা বনে-গাছতলায়


রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো দুর্গম এলাকায় বনে পরিত্যক্ত ঘর ও গাছতলায় অবস্থান করছে। শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে পরিবারগুলো।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর দুর্গম ভূইয়াছড়া, মধ্যমপাড়া, রাঙাপানিছড়া, হারিহাবা ও গনছড়া এলাকায় কয়েক শ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তিনটিলা, বাত্যাপাড়া ও মানিকজোড় গ্রামের লোকজন ছাড়াও আশপাশের বেশি কিছু গ্রামের মানুষ ভয়ে জঙ্গলে পালিয়েছে। সেখানে তাঁরা পরিত্যক্ত ঘর ও গাছতলায় অবস্থান করছেন।

আজ শনিবার দুপুরে লংগদু সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ভূইয়াছড়া ও রাঙাপানিছড়া এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে কমপক্ষে দেড় শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তারা বনে পরিত্যক্ত ঘর ও গাছতলায় অবস্থান করছে। সেখানে কথা হয় তিনটিলা গ্রামের প্রেম রঞ্জন চাকমার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভয়ে ভূইয়াছড়া এলাকার জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছি। এখানে থাকার কোনো বাড়ি-ঘর নেই। আমরা চার পরিবারে একটি পরিত্যক্ত ঘরে কোনো রকমে গাদাগাদি করে থাকছি।’ তিনটিলা গ্রামের পূর্ণ বিকাশ চাকমা একই কথা বলেন।


তিনটিলা গ্রামের কালা সোনা চাকমা অভিযোগ করেন, তাঁর মা গুনবালাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে দুপুর ১২টার দিকে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এক জরুরি মতবিনিময় সভায় অনুষ্ঠিত হয়। লংগদু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে থাকা বাঘাইছড়ির ইউএনও মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মানজারুল মান্নান, জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাঈদ তারিকুল হাসান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তোফাজ্জল হোসেন, জনসংহতি সমিতির লংগদু শাখার সভাপতি মনি শংকর চাকমা, লংগদু সদর ইউপি চেয়ারম্যান পুলিন মিত্র চাকমা প্রমুখ।লংগদুতে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক শ পরিবার দুর্গম ভূইয়াছড়া এলাকার বনে আশ্রয় নিয়েছে। ছবিটি আজ দুপুরে তোলা। ছবি: সাধন বিকাশ চাকমা।

জেলা প্রশাসক বলেন, এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ইন্ধন জুগিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত তাদের খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। গুণাবালা চাকমা (৭০) যদি আগুনে পুড়ে মারা গিয়ে থাকেন, তবে তাঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে পাহাড়ি গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেওয়া ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। শুক্রবার রাত নয়টার দিকে লংগদু থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. দুলাল হোসেন বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা তিন শতাধিক বাঙালিকে আসামি করে মামলা করা হয়। এর মধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ইউনিয়ন যুবলীগের এক নেতার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল শুক্রবার সকালে লংগদু উপজেলা সদরের চারটি গ্রামের অন্তত ২০০ ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িরা এ ঘটনার জন্য বাঙালিদের দায়ী করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসন উপজেলা সদর ও আশপাশের এলাকায় গতকাল বেলা একটা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে খাগড়াছড়ি সদরের চারমাইল এলাকায় রাস্তার পাশের জঙ্গল থেকে লংগদু উপজেলার সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নুরুল ইসলামের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেদিন সকালে মোটরসাইকেলে দুজন যাত্রী নিয়ে তিনি লংগদু থেকে খাগড়াছড়ি যাচ্ছিলেন। বাঙালিদের অভিযোগ, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে এবং এ ঘটনার সঙ্গে পাহাড়ি কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জড়িত।

ইউএনও বলেন, পরিস্থিত শান্ত হওয়ায় আজ ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হয়েছে। লংগদু উপজেলার পরিবেশ এখন স্বাভাবিক হয়ে আসছে।

লংগদু উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. তৈয়ব বলেন, এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ির দূরত্ব বেশি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা করতে একটু দেরি হচ্ছে। আগামীকালের মধ্যে পুড়ে যাওয়া বাড়িঘরের তালিকা করতে পারব। এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ১৫০টি বাড়িঘরের তালিকা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা দুই শতাধিক হতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।


Categories: চট্টগ্রাম বিভাগ,জাতীয়,সারাদেশ

ব্রেকিং নিউজ