ভান্ডারিয়ায় ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার

পিরোজপুর: পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে চিকিৎসার সকল সুব্যবস্থা। তার পরেও সরকারি এই হাসপাতালটির দেওয়ালের অপর পাশেই একটি ভবনে রয়েছে লাবন্য ক্লিনিক এন্ড নাসিং হোম এবং লাবন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সরকারি হাসপাতালের কোন চিকিৎসক রোগীদের পরীক্ষার কথা বললেই তাদেরকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় লাবন্য ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। আর কোন অপারেশনের বিষয় থাকলেও তাদেরকে পাঠানো হয় ওই ভবনের লাবন্য ক্লিনিক এন্ড নাসিং হোমে। হাসপাতালে ভীড় না থাকলেও, বেসরকারি এই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র দুটিতে সারাক্ষণই রোগীদের ভীড় লেগে থাকে। এছাড়া গত বছরের জুন মাসে শেষ হয়েছে এর লাইসেন্সের মেয়াদ। ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সেবার অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে সাংবাদিকদের দিকে তেরে আসে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। পিরোজপুরের ৭টি উপজেলায় একটি জেলা হাসপাতাল এবং ৭টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। সরকারি এই স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। এরপরও স্থানীয় দালাল এবং স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর অসাধু চিকিৎসক এবং কর্মচারীদের মাধ্যমে রোগীদের বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা এবং অপারেশন করা হয় ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা নি¤œমানের ব্যক্তিগত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এতে একদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। আর অন্যদিকে সাধারণ মানুষ নি¤œমানের ও ভুল চিকিৎসা নিয়ে হচ্ছে প্রতারিত। মেডিকেল প্রাকটিস এন্ড প্রাইভেট ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরি অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ আইন অনুসারে প্রত্যেক ক্লিনিকে রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত আবাসন ব্যবস্থা, প্রত্যেক বেডের জন্য কমপক্ষে ৮০ স্কয়ার ফিট জায়গা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অপারেশন থিয়েটার, পর্যাপ্ত পরিমানে জীবন রক্ষাকারী ও অতীব প্রয়োজনীয় ঔষধের সংরক্ষণ, সার্বক্ষণিক নিবন্ধিত ডাক্তার, নার্স ও স্টাফ এবং অপারেশন, চিকিৎসা ও তত্ত্বাবধানের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থাকতে হবে। তবে বাস্তবে এর প্রায় সবগুলোই অনুপস্থিত এসব ব্যক্তিগত চিকিৎসাসেবা প্রদান কেন্দ্রগুলোতে। আর সরকারি হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তাররাই মূলত দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করে ছুটে যান এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে। সেখানে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা, ক্লিনিকে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার কাজগুলো করেন। আর চিকিৎসকদের সহকারী হিসেবে কাজ করেন নিবন্ধনহীন ও অদক্ষ নার্স এবং টেকনিশিয়ান। এছাড়া মাঝেমধ্যে ভূয়া চিকিৎসক এবং টেকনোলজিস্টদের দিয়ে রিপোর্ট তৈরী করা হয়। এসব কারণে রোগীদের না না ভাবে প্রতারিত হতে হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে দেওয়া হচ্ছে ভুল রিপোর্ট। অতিরিক্ত খরচ বহনের পাশাপাশি প্রিয়জনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে এসব বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলেতে। তবে সকল নিয়ম মেনেই বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে বলে দাবি এর কর্তাব্যক্তিদের। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু এবং দালালদের দৌরাত্মের কথা স্বীকার করে পিরোজপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ হাসনাত ইউসুফ জাকী জানান তারা পর্যায়ক্রমে সকল বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হবে । বর্তমানে পিরোজপুরে ৩৫ টি ক্লিনিক ও ৬৬ টি নিবন্ধিত ডায়াগনষ্টিক সেন্টার রয়েছে।

Categories: জাতীয়,জীবন যাপন,ব্রেকিং নিউজ

ব্রেকিং নিউজ