৮ জুন হল খুলবে, মামলা প্রত্যাহার চান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল ৮ জুন খুলে দেওয়া হবে। আজ শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এদিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্য মঞ্চ সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়ে শেষ হয় বেলা আড়াইটার দিকে। সভা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ৮ জুন হল খোলার আগেই নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া মহাসড়কে গতিরোধক নির্মাণ করা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। হল খুললে উপাচার্য ভবন, হল ও ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এ ছাড়া ঈদের পর আগামী ৯ জুলাই থেকে ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে এবং আইনজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে।’

বেলা আড়াইটার দিকে নতুন কলা ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্য মঞ্চ। এখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অনামিকা নাগ। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার, নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিচার, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ প্রক্টরকে জবাবদিহির আওতায় আনা, অপরাধী চালককে আইনের আওতায় আনা, নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা ইত্যাদি দাবি তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম অনীক বলেন, ‘গত ২৬ মে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। আমি ২৫ মে থেকেই ক্যাম্পাসের বাইরে আছি। অথচ আমাকেও মামলার আসামি করা হয়েছে।’ দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আয়শা ইসলাম বলেন, ‘উপাচার্যের বাসা ভাঙচুরের ঘটনায় করা মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম না।’

সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে মামলা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আমরা কাজ করে যাব। আগামীকাল আমাদের দাবি আদায়ে মানববন্ধন করব।’


সংবাদ সম্মেলনে অন্য শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এ মামুন, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি মির্জা তসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, দর্শন বিভাগের শিক্ষক রায়হান রাইন প্রমুখ।

২৬ মে শুক্রবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল-সংলগ্ন সিঅ্যান্ডবি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ছাত্র নাজমুল হাসান ও মেহেদি হাসান নিহত হন। নাজমুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩তম ব্যাচের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর বাড়ি পাবনা সদরে। একই ব্যাচের মেহেদি মাইক্রো-বায়োলজির শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায়।

এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং নিহত দুই ছাত্রের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে পরের দিন দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বিকেল সোয়া ৫টা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে সড়ক অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের ওপর সাভার ও আশুলিয়া থানার পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এ ঘটনার জের ধরে বিকেলে উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুর করা হয়। উপাচার্যের বাসভবন ভাঙচুরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা মামলায় ৪২ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২৭ মে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।


Categories: শিক্ষাবার্তা,সারাদেশ

ব্রেকিং নিউজ