নেত্রকোনার বিভিন্ন স্থানে আজ শনিবার বিকেলে ঝড়ের তাণ্ডবে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অন্তত ৩৫ জন। গুরুতর আহত দুজনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ঝড়ে মারা যাওয়া ওই নারীর নাম নুরুন্নাহার বেগম (৪৮)। তিনি জেলার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের কদমশ্রী গ্রামের মঞ্জু মিয়ার স্ত্রী। গুরুতর আহত দুজন হলেন, একই গ্রামের মাসুম মিয়া (৩৫) ও আটপাড়া উপজেলার বিজয়পুর গ্রামের আনোয়ারা বেগম (৭০)। আহত অন্যরা মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, স্থানীয় হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘূর্ণিঝড়ে মদনের গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের কদমশ্রী, ফতেপুর, নায়েকপুর, তিয়শ্রী ও চানগাঁও ইউনিয়নে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি ও অসংখ্য গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড়ের সময় ঘরের ওপর গাছ পড়ে কদমশ্রী গ্রামের মঞ্জু মিয়ার স্ত্রী নুরুন্নাহার বেগম মারা যান।
ঝড়ের পর নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক মুশফিকুর রহমান ও মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওয়ালীউল হাসান ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখেন।
এদিকে জেলার আটপাড়া উপজেলায় ঝড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সহস্রাধিক কাঁচা, টিনশেড ও আধপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে। এ সময় বসতঘরের ওপর গাছ পড়ে উপজেলায় বিজয়পুর গ্রামের আনোয়ারা বেগম (৭০) নামে এক নারী গুরুতর আহত হয়েছেন। মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঝড়ের পর থেকে ওই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বেলা দুইটার দিকে আটপাড়া উপজেলার তেলিগাতি ইউনিয়নের গন্ধর্বপুর, তেলিগাতি, বিজয়পুর, বড়তলি, শ্রীরামপাশা, শাসনকান্দি, কামারগাতি, পূর্ব হাতিয়র, পশ্চিম হাতিয়র, ইকরাটিয়া, তেলিগাতি বাজারসহ ১২টি গ্রামে হঠাৎ করে পাঁচ মিনিটের ক্ষণস্থায়ী ঝড় প্রচণ্ড বেগে আঘাত হানে। এতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়।
তেলিগাতি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হাসান বলেন, ঝড়ে গ্রামগুলোর অধিকাংশ ঘরসহ গাছপালা ও বিদ্যুৎ লাইনের ক্ষতি হয়েছে। দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তেলিগাতি ডিগ্রি কলেজ, কয়েকটি মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা ও মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নারী-শিশুসহ বেশ কিছু মানুষ ঘরের নিচে চাপা পড়ে আহত হয়েছে।
তেলিগাতি ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামিম আরা বেগম বলেন, ‘কিছুক্ষণের মধ্যেই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গিয়ে ঝড় শুরু হয়। পাঁচ মিনিটের মতো ঝড়ে আমাদের কলেজের চারটি টিনশেড ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়ালী উল্লাহ বলেন, তেলিগাতি কলেজসহ কয়েকটি বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ঘরের চাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক মজিবুর রহমান বলেন, রোববারের মধ্যেই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।
জেলা প্রশাসক মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে তাৎক্ষণিক নগদ ১০ হাজার টাকা এবং আহত ৬ পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে আরও সহায়তা করা হবে।