দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আর্তমনবতার সেবায় এগিয়ে আসার জন্য দেশের বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিত্তশালীরা এগিয়ে এলে দেশের জনগণের আর কষ্ট থাকবে না।
তিনি বলেন, ‘রণদা প্রসাদ সাহা আমাদের দেশের নারী শিক্ষার প্রসার ঘটানোর থেকে শুরু করে মানবতার সেবার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করার আমাদের দেশে অনেক বিত্তশালী আছেন, তারাও করতে পারে। তাহলে আমাদের দেশের মানুষের আর কোনো কষ্ট থাকবে না।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) অপরাহ্নে কমুমুদিনী ট্রাস্ট কমপ্লেক্সে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্মারক স্বর্ণপদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
জাতির পিতার ছোট মেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ব্যাপকভাবে মানুষের জন্য কাজ করেছিলেন, তিনি বিধবাদের জন্য কাজ করেছিলেন। তিনি শুধু মানুষের সেবা করার জন্য এবং মানুষকে মানুষের মত বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বিরাট এক কর্মযজ্ঞ গড়ে তুলেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রণদা প্রসাদ দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সত্ত্বেও পরিশ্রম ও বুদ্ধিমত্তায় তিনি বাংলার অন্যতম ধনী হিসেবে পরিণত হয়েছিলেন। তবে, অর্থ-বিত্তের মালিক হওয়ার পরও তিনি ভোগ-বিলাসে ডুবে যাননি। বরং অর্জিত অর্থ মানবকল্যাণে ব্যয় করেছেন।
নারী শিক্ষার প্রসারে রণদা প্রসাদের ভূমিকা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি একে একে ভারতেশ্বরী হোমস, কুমুদিনী কলেজ এবং পিতার নামে দেবেন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং দেশের বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তিনি আর্থিক সহায়তা দেন।
তিনি বলেন, কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরবর্তী প্রজন্ম প্রতিষ্ঠাতার মানবিক প্রয়াস- প্রান্তিক অসহায় জনপদে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ও নারী শিক্ষা প্রসারে নিজেদের নিবেদিত রেখেছেন। ট্রাস্টের সেবা কর্মযজ্ঞে যুক্ত হয়েছে কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী নার্সিং স্কুল ও কলেজ এবং রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়। অনগ্রসর মানুষের কল্যাণের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কুমুদিনী ট্রেড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট।
কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট অব বেঙ্গল (বিডি) ৮৬ বছর কার্যকাল পূর্তি উপলক্ষে চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে এ বছরের দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদকে ভূষিত করা হয়। তারা হলেন– গণতন্ত্রের মানসপুত্রখ্যাত তদানিন্তন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (মরণোত্তর), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), ভাষা সৈনিক ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ও প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী শাহবুদ্দীন আহমেদ।
সোহরাওয়ার্দীর পক্ষে শেখ রেহানা এবং জাতীয় কবির পক্ষে কবির নাতনী খিলখিল কাজী প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ট্রাষ্টের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিব প্রসাদ সাহা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ট্রাষ্টের পরিচালক ও ভাষা সৈনিক প্রতিভা মুৎসুদ্দি এবং পরিচালক শ্রীমতি সাহা।স্বাগত বক্তৃতা করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেন।
অনুষ্ঠানে রণদা প্রসাদ সাহা’র জীবন এবং কর্মের উপর একটি প্রামান্য চিত্র প্রদর্শিত হয়।
জাতীয় সংগীত এবং দেশাত্বরোধক গানের মধ্যদিয়ে শুরু এই অনুষ্ঠানে ভারতেশ্বরী হোমসের মেয়েরা বর্ণাঢ্য ডিসপ্লে প্রদর্শন করে।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রি পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন দেশের ক’টনিতিক এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সদস্যবৃন্দ, বিশিষ্ট নাগরিকগণ এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারে চড়ে দিনব্যাপী টাঙ্গাইল সফরে মির্জাপুর হেলিপ্যাডে পৌঁছলে জেলা পুলিশ প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।
পরে প্রধানমন্ত্রী কুমুদিনী কমপ্লেক্স থেকে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে জেলার ৩১টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।