রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সারাদেশে পাচার হচ্ছে ইয়াবা

সরকারি ও বিভিন্ন দাতা সংস্থা প্রদত্ত মূল্যবান ত্রাণ সামগ্রী ও নগদ টাকা পেয়ে রোহিঙ্গারা এখন খোশমেজাজে রয়েছে। আরাম-আয়েশে দিন যাপন করলেও রোহিঙ্গারা তাদের বাপ-দাদার পেশা এখনও ছাড়েনি। বর্তমানে রোহিঙ্গাদের কোন কাজ কর্ম না থাকায় ইয়াবা ব্যবসা ও সেবনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে তারা। উখিয়া থানা পুলিশ প্রতিদিন রোহিঙ্গা ইয়াবা পাচারকারীদের আটক করলেও শীর্ষ রোহিঙ্গা ও স্থানীয় ইয়াবা পাচারকারীরা রয়ে গেছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

গত রাতে মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) উখিয়া পুলিশের হাতে ইয়াবাসহ আটক দুই রোহিঙ্গার সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

পালংখালী ইউনিয়নের আলমগীর ফারহাদ মানিক সাংবাদিকদের জানান, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রহমতেরবিল গ্রাম রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়। সেখানে ইদানিং একই গ্রামের ফরিদের ছেলে হারুনের হোটেলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে স্থানীয় ও রোহিঙ্গা শীর্ষ ইয়াবা কারবারীদের নিরাপদ বৈঠক খানা। হারুন হোটেল ব্যবসার পাশাপাশি ইয়াবা ব্যবসার সাথেও জড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। উক্ত স্থানেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অবস্থান করেই বড় বড় ইয়াবার চালানের লেনদেন হয়।


শীর্ষ ইয়াবা পাচারকারীদের তালিকায় রয়েছে, তাজনিমারখোলা ক্যাম্পের নজিবুল হক, টিভি টাওয়ার এলাকায় বসবাসরত রাখাইনের সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আলম। এছাড়ও পুতিয়া ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক ইয়াবা জগত নিয়ন্ত্রণ করে চিকুইন্যাসহ প্রায় ১০/১২জন ইয়াবা কারবারী।

কুতুপালং ক্যাম্প থেকে ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে আটক করইবনিয়া গ্রামের মোঃ হোসাইনের ছেলে আব্দুস ছালাম (৪৮) ও রুমখা বাজার পাড়া গ্রামের মৃত জমির আহম্মদের ছেলে রাজা মিয়া (৩৭) জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ইয়াবার চালান সারা দেশে পাচার হচ্ছে। এদের সঙ্গে আমাদের দেশের মানুষও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। এদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বাংলাদেশকে কখনও ইয়াবা মুক্ত করা যাবে না।

তারা নিজেরাও ক্যাম্প থেকে ইয়াবা ক্রয় করে স্থানীয় ভাবে লেনদেন করার কথা স্বীকার করে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ করা না হলে ইয়াবা পাচার ও লেনদেন প্রতিরোধ করা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে কঠিন হয়ে পড়বে।

রহমতেরবিল গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী রওশন আলী, আলী আকবর ও ছৈয়দ নুরসহ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, রহমতেরবিল গ্রামে এমন কোন ঘর নেই যে ঘরে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়নি। অথচ রোহিঙ্গা আসার আগে তারা দু’বেলা ভাতও জুটতো না।

উখিয়া পুলিশের উপ পরিদর্শক মোরশেদ জানান, তিনি মঙ্গলবার রাতে রহমতেরবিল গ্রামের কলিমুল্লাহ লাদেনসহ বেশ কয়েকটি বাড়ীতে তল্লাশি চালিয়ে স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে ছাড়া কাউকে পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় ইয়াবা কারবারী নুর বানু মেম্বারের দুই ছেলে সোহেল, জাবেদ, হিজোলীয়া গ্রামের মোঃ শফির ছেলে মীর জাফর, ঠান্ডা মিয়ার ছেলে বাবুল, উখিয়ার মহুরী পাড়া গ্রামের মৃত বদিউর রহমানের ছেলে জালাল উদ্দিন প্রকাশ জালু, খয়রাতি পাড়া গ্রামের আলী আহম্মদের ছেলে আতা উল্লাহ, হাজির পাড়া গ্রামের বদিউর রহমান সিকদারের ছেলে মীর আহম্মদ, টিএন্ডটি লম্বাঘোনা গ্রামের মৃত ফকির আহম্মদের ছেলে মাহমুদুল করিম খোকা, দোছড়ি গ্রামের আলী আহম্মদের ছেলে মাহমুদুল হক, থাইংখালী ঘোনার পাড়া গ্রামের নুইজ্যার ছেলে গুরা মিয়া, পন্ডিত পাড়া গ্রামের হামিদুল হকের ছেলে হুমায়ুন, বালুখালী জুমের ছড়া গ্রামের লম্বা পুতিয়ার ছেলে ইয়াবা ফরিদ, বালুখালী উখিয়ার ঘাট গ্রামের বুজুরুজ মিয়া, রহমতেরবিল গ্রামের জালাল আহম্মদের ছেলে আনোয়ার, সোনার পাড়া গ্রামের জাগির হোসেন মাষ্টারের ছেলে লুৎফুর রহমান লুইত্যা, রহমতেরবিল গ্রামের শামশুল আলমের ছেলে আব্দুর রহিম, পশ্চিম মরিচ্যা গোরাইয়ার দ্বীপ গ্রামের শামশুল হকের ছেলে আল আমিন ভুট্টো ও একই গ্রামের হাজী মোজাফফর আহম্মদের ছেলে আব্দুল আজিজসহ ২৫/৩০ জনের একটি সিন্ডিকেট রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক ইয়াবা লেনদেনসহ তাদের মধ্যে আত্মার সর্ম্পক গড়ে উঠায় অনেক সময় রাতের বেলায় এসব ইয়াবা কারবারীরা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকে বলে জানা গেছে।

এদিকে সীমান্ত সংলগ্ন মৎস্য ঘের, রহমতেরবিল সাইক্লোন সেন্টার, নাফ নদীর বেড়ীবাধঁসহ পাহাড় জঙ্গলে এসব পাচারকারীরা আশ্রয় নেওয়ার কারণে পুলিশ রাতের বেলায় ঝুঁকি নিয়ে হানা দিয়েও সফল হচ্ছে না। তবে ইতোমধ্যে উখিয়ার শীর্ষ ইয়াবা পাচারকারী বালুখালীর জাহাঙ্গীর, থাইংখালীর জাহাঙ্গীর, থাইংখালীর জয়নাল মেম্বার, উখিয়ার জাদিমোরা এলাকার কবির আহম্মদ ও কুতুপালং ক্যাম্পের জিয়াবুল হকসহ একডজন ইয়াবা কারবারীকে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করার কথা স্বীকার করে উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের জানান, তিনি উখিয়ায় অবস্থান কালীন সময়ে ইয়াবা পাচার স্বমূলে বিনাস করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে।


Categories: সারাদেশ

ব্রেকিং নিউজ